আলোকচিত্রে প্রতিবাদ

আলোকচিত্রে প্রতিবাদ

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কয়ারে পথ চলতি মানুষ হঠাৎ থমকে দাঁড়ান। কৌতূহল ভর করে তাঁদের চোখে-মুখে। দৃষ্টি বোলান ছবিতে। ছবি দেখে তাঁদের মুখের রং বদলায়। একটু আগেও হয়তো মৃদু আলাপে বা সঙ্গীর সঙ্গে হাসতে হাসতেই এদিকে আসছিলেন, কিন্তু মুহূর্তেই যেন চোখ আর্দ্র হয়ে যায়।

 

মিয়ানমারে নৃশংসতার শিকার লাখো রোহিঙ্গার জীবন-গল্প দেখলে কার না মন ভার হয়। যাঁরা নির্যাতন সইতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। শরণার্থীশিবিরে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবনই ফ্রেমবন্দী হয়ে ঝুলছে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে। অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি আলোকচিত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরতে এই প্রদর্শনী নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন শহরে।

 

সালাহউদ্দিন চাকরি করছেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের পরিবেশ, ভূমি, পানি ও পরিকল্পনা বিভাগে। রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করা ‘ফিল্ম ফর পিস ফাউন্ডেশন’-এ থাকা তাঁর পরিজনদের কাছে প্রায়ই শোনেন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কথা। তাঁদের সঙ্গেই সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির ঘুরে গেছেন।

 

অস্ট্রেলিয়ায় ফিরেই রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে মাঠে নামেন। তবে বিপত্তি হলো এই মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে অনেক অস্ট্রেলীয় এখনো জানেন না। তাই মানুষকে জানানোর কাজটি আগে করছেন। এ জন্য বেছে নিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তোলা বিভিন্ন আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন।

 

শুরুটা করেছিলেন তাঁর কাজের জায়গায়। সহকর্মীদের কাছ থেকে বেশ সাড়াও মেলে সেই প্রদর্শনীতে। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অল্পস্বল্প তহবিলও সংগ্রহ করেন সেখানে। তারপর আর থেমে থাকেননি। ১৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কয়ারে যখন পতপত করে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল, তখনই উদ্বোধন করা হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। আয়োজনের নাম দিয়েছেন, ‘মানবতার বিরুদ্ধে নৃশংসতা’। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের প্রদর্শনীর পর সিডনির ওয়িনধাম পার্কে আগামী ৬ জানুয়ারি আবারও আয়োজন করবেন। প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ অনুদান হিসেবে পাঠানো হবে বলে জানালেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

 

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭।