লা গ্যালারিতে একক স্কেচ প্রদর্শনী ‘জনারণ্যে নীরবতা’
আলো কিংবা আঁধার, শীত কিংবা বর্ষা, জাতীয় সংসদ ভবনকে এক এক সময়ে দেখতে এক এক রকম লাগে। পৃথিবীর এ এক বিস্ময়কর স্থাপত্য। দেশের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী এবং স্থপতিদের কাছে এটি দেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক স্থাপনা। সাজিদ-বিন-দোজা ভবনটিকে দেখেছেন শিল্পীর চোখে। নানা সময়কে মাথায় রেখে তিনি এঁকেছেন ভবনটিকে। সেসব ছবি নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে একটি প্রদর্শনী।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের স্থপতি সাজিদ-বিন-দোজার অষ্টম একক স্কেচ প্রদর্শনী ‘জনারণ্যে নীরবতা’। সেখানে রয়েছে সংসদ ভবনের বিভিন্ন আঙ্গিকের ২৫টিরও বেশি চিত্রকর্ম। এগুলো আঁকতে মাধ্যম হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন প্যাস্টেল, জলরং, কলম, পেনসিল, চারকোল, কালি, পোস্টার কালার, ওয়াশ, রং পেনসিল ও তেল প্যাস্টেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নগরজীবনে আমরা সংসদ ভবনটিকে এড়িয়ে যাই। অথচ একটি শহর বা এলাকায় এ রকম একটি স্থাপত্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ভবনটি আমাদের শহরটিকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিতি দিয়েছে। এই শহরে কংক্রিটের যে ধরন আমরা দেখি, সংসদ ভবনটি সেসব থেকে পুরোপুরি ব্যতিক্রম। বিভিন্ন ঋতুতে এর যে চেহারা হয়, সেখান থেকে আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারি। নতুন প্রজন্মের কাছে জানাতে পারি, আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ ভবনটি শুধু আমাদের নয়, এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।
প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, ‘সংসদে যখন অধিবেশন থাকে না, এ ভবনটির ভেতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটতে ইচ্ছে করে। মনে হয় এর ভেতরে যেন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। মনে হয় এ ভবনের সঙ্গে কথা বলা যায়, একে স্পর্শ করা যায়। সংসদ ভবনকে আঁকার পেছনে শিল্পীর নিশ্চয়ই কোনো ভাবনা আছে, আবেগ আছে। সৃজনশীলতাকে ধারণ করতে চেয়েছেন তিনি। এ কাজ নিয়ে নিশ্চয়ই তাঁর কিছু পরিকল্পনাও আছে। তরুণদের জন্য এ কাজগুলো চমৎকার অনুপ্রেরণা।’
‘জনারণ্যে নীরবতা’ প্রদর্শনীর ছবিগুলো ঘুরে দেখছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর
প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন একজন তরুণ দর্শক। ছবি: সংগৃহীতঅনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন স্থপতি কবি রবিউল হুসাইন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) সভাপতি কাজী গোলাম নাসির। রবিউল হুসাইন বলেন, ‘কিছু কাজ হাত দিয়ে করা হয়, কিছু কাজ করা হয় হাত ও মাথা উভয় ব্যবহার করে। এর সঙ্গে যখন হৃদয় যুক্ত হয়, তখন তা হয় অন্য রকম কিছু। বাংলাদেশের সংসদ ভবন সে রকম একটি কাজ। এটি বাংলার ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিদেশ থকে অনেকে বাংলাদেশে আসেন, শুধু এ ভবনটিকে দেখার জন্য।’ তিনি বলেন, ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, ঢাকার ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। রাজধানীকে ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে।
প্রদর্শনীটি উৎসর্গ করা হয়েছে জাতীয় সংসদের স্থপতি লুই আই কানকে। প্রদর্শনী দেখা যাবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। লা গ্যালারি খোলা থাকে সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা, শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
মন্তব্য (0)
ফেসবুক মন্তব্য (0)