বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি চর্চার ধারা
নিসর্গবিদ ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদ ২০০৯ সালে প্রকাশিত তার একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৭৩ সালের বিজয় দিবসে তৎকালীন আর্ট কলেজে ‘বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি বড় আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীটি দুই অংশে বিভক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে একাংশের উপ-শিরোনাম হল ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ এবং বাংলাদেশের নৈসর্গিক রূপ নিয়ে আরেক অংশ- ‘আমার বাংলাদেশ’। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রযোজনায় আয়োজিত এই প্রদর্শনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ড. নওয়াজেশ। ২০১২ সালে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, এই প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করেই মূলত আর্ট কলেজে ফটোগ্রাফির একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার আলোচনা জোরালো হয়। আর্ট কলেজের সে সময়ের অধ্যক্ষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনও সম্মতি দিয়েছিলেন। আলাপ-আলোচনা করতে করতেই এসে যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। শুধু রাজনীতিই নয়, ওলটপালট হয়ে যায় সব। আর্ট কলেজে জায়গা করে নিতে পারল না বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি। তারপর ১৯৮৯ সালে নাকি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আলোকচিত্র বিভাগ খোলার বিল পাস হয়েছিল। কই বাস্তবায়ন তো হল না! আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কিংবা শিল্পকলা একাডেমিতে হয়তো সত্তরের দশকে শুরু হওয়া সেই আলোচনাটিও নেই। তাই বলে বাংলাদেশে থেমে থাকেনি ফটোগ্রাফিচর্চা। কর্মবীর ও সৃষ্টিশীল মানুষেরা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকেন না। আমাদের আলোকচিত্রপ্রেমীরা তার প্রমাণ দিয়েছেন, এখনও ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা ব্যক্তি-উদ্যোগেই এ দেশে এগিয়ে চললো ফটোগ্রাফিচর্চা। আজ বিশ্বজয়ী বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা। বিদেশিরা এখন আমাদের আলোকচিত্রীদের কাজের দিকে তাকিয়ে রয়। ঈর্ষণীয় একটি অবস্থানে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি। ওই বিদেশিরাই বিশ্বাস করবে না- এই সফলতার ইতিহাস রচিত হয়েছে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই!
ভারতবর্ষে ফটোগ্রাফিচর্চার শুরু উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে। তবে ফটোগ্রাফির পরশ পাথরের ছোঁয়ার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হল প্রায় একশ’ বছর! ১৯৫২ সালে গোলাম কাসেম ড্যাডিই প্রথম পূর্ব-পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ফটোগ্রাফিচর্চার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ট্রপিকাল ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি। কিন্তু তার ফটোগ্রাফিচর্চার শুরুটা আরও আগে- ১৯১২ সালে, জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে। দেশভাগের পর পূর্ব-পাকিস্তানে চলে আসতে বাধ্য হন। ড্যাডিসহ পাঁচ-সাতজন সদস্য নিয়ে ইন্সটিটিউট যাত্রা শুরু করে, কিন্তু তিনি ছাড়া আর কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন সে সম্পর্কে জানা যায় না। ট্রপিকাল ছিল একই সঙ্গে একটি স্টুডিও ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৬২ সালে নিজের ইন্দিরা রোডের বাড়িতে তিনিই গড়ে তুললেন ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব। বাংলাদেশে ফটোগ্রাফিচর্চার ইতিহাসে ড্যাডির এই সংগঠনটি অপরিসীম অবদান রাখে। এই ক্লাবকে ঘিরে একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল আলোকচিত্রীর বিকাশ হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ক্লাবের সদস্য ছিলেন, মনজুর আলম বেগ, গোলাম মোস্তফা, বিজন সরকার, সাজেদা বেগম প্রমুখ।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ফটোগ্রাফিচর্চার দ্বার উন্মোচিত হয় গত শতাব্দীর ওই পঞ্চাশের দশকেই। এই দশকটিকে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফিচর্চার ইতিহাসের সোনালি যুগ বললে ভুল হবে না। এ সময় আলোকচিত্রী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন নাইব উদ্দিন আহমেদ, আমানুল হক, সাঈদা খানমসহ আরও অনেকে। পঞ্চাশের দশকে জনপ্রিয় স্টুডিওগুলোর মধ্যে মেসার্স যাঈদী অ্যান্ড কোং, ফটো মুভি অ্যান্ড স্টিলস, কাফেলা ফটোগ্রাফার্স, ডাস কোম্পানি, ক্রিসেন্ট, করনেশন, গণি স্টুডিও, গণি ব্রাদার্স অন্যতম।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১-এর সময়টা যেমন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, বাংলাদেশের ফটোগ্রাফির জন্যও এই বছরগুলো তাৎপর্যপূর্ণ। গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে আলোকচিত্রের উপজীব্য করে একদল আলোকচিত্রী নিজেরা তো অমর হয়ে রইলেনই, দেশের ফটোগ্রাফিচর্চাকেও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। তাদের মধ্যে রশীদ তালুকদার, মোহাম্মদ আলম, শফিকুল ইসলাম স্বপন, মোহাম্মদ শফি, রফিকুল ইসলাম, আফতাব আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন, নইব উদ্দিন আহমেদ, জালালুদ্দিন হায়দার, আবদুল হামিদ রায়হান, সাঈদা খানম অগ্রগণ্য।
বাংলাদেশের আলোকচিত্র বিদ্যায় অনন্য অবদান রেখে যিনি প্রবাদপুরুষ হয়ে আছেন সেই ধীমান মানুষটি হলেন মনজুর আলম বেগ। বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা তাকে ‘আলোকচিত্রাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব প্রতিষ্ঠার আগেই বেগ সাহেব ১৯৬০ সালে বেগার্ট ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে, ১৯৬৪ সালে পুরান ঢাকার আর্মানিটোলায় পূর্ব-পাকিস্তান সমাজকল্যাণ দফতরের ইয়ুথ-ওয়েলফেয়ার বোর্ডের অধীনে চালু হয় ফটোগ্রাফিক ট্রেনিং সেন্টার। ফটোসাংবাদিক গোলাম মাওলাসহ অনেকে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৭২ সালে রশীদ তালুকদারের নেতৃত্বে রাজধানীতে গড়ে উঠল বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। ফটোসাংবাদিক শামসুল ইসলাম আল মাজী, গোলাম মাওলা প্রমুখ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতষ্ঠিাতা সদস্য ছিলেন। তারপর ১৯৭৬ সালে এম. এ. বেগের নেতৃত্বে ঢাকায় আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জ্বলজ্বল করে উঠল একটি নক্ষত্র। নাসির আলী মামুন। বাংলাদেশে পোরট্রেট ফটোগ্রাফি বিকশিত হয়েছে তার একাগ্র একক প্রচেষ্টায়। এই ক্ষেত্রে তিনি অদ্বিতীয়, যেদিন ক্যামেরা হাতে উঠল সেদিন থেকেই তার ছবির বিষয় মানুষের মুখ। সত্তরের দশকের গোড়া থেকে তিনি সচেতনভাবে খ্যাতিমান মানুষদের বিভিন্ন দুর্লভ মুহূর্ত অনুসন্ধানী ক্যামেরায় বন্দি করতে শুরু করেন। তাকে দেশি পোরট্রেট ফটোগ্রাফির জীবন্ত কিংবদন্তি বললে ভুল হবে না। গত ৪৬ বছরে দেশি-বিদেশি শত শত ব্যক্তিত্বকে তিনি তার ছবিতে মূর্ত করেছেন। কবি শামসুর রাহমান তাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ‘ক্যামেরার কবি’ হিসেবে।
১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত সেই অর্থে আর কোনো ফটোগ্রাফিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। উঠলেও সে সম্পর্কে তথ্য আমাদের হাতে নেই। বেগার্ট ও বিপিএসসহ হাতেগোনা কয়েকটি সংগঠনকে কেন্দ্র করেই নব্বইয়ের দশকের আগ পর্যন্ত ফটোগ্রাফিচর্চা চলল। টুকরো টুকরো লেখা ও সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, এই সময়ে আমাদের আলোকচিত্রীরা নতুন সংগঠন প্রতিষ্ঠার চেয়ে চর্চায় মন দিয়েছিলেন। এ সময় তারা প্রদর্শনী করছেন, বই বের করছেন এবং দেশে-বিদেশে আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। আশির দশকে এসে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফিচর্চা আরও বেশি ঋদ্ধ ও সুসংগঠিত হল। আলোকচিত্রের বাস্তবতার গায় একটু একটু রোমান্টিসিজমের রং লাগতে শুরু করল। কম্পোজিশন ভাঙা শুরু হল। উঁকি দিল পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। এ সময় আমরা পেলাম একঝাঁক সৃজনশীল আলোকচিত্রীকে- আজিজুর রহীম পিউ, পাভেল রহমান, হাসান সাইফুদ্দিন চন্দন, রেজাউল ইসলাম কল্লোল, চঞ্চল মাহমুদ, খালিদ মাহমুদ মিঠু, মিশুক মুনীর, এবিএম আখতারুজ্জামান, শোয়েব ফারুকী, পল ডেভিড বারিকদার, রফিকুর রহমান রেকু, সৈয়দ লতিফ হোসেন প্রমুখ। তাদের অনেকেই তখন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক।
১৯৮৯ সালে বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী ড. শহিদুল আলম ও নৃবজ্ঞিানী রেহনুমা আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের প্রথম ফটো এজেন্সি- দৃক পিকচার লাইব্রেরি। বলা যায়, একটি বৈপ্লবিক উদ্যোগের মধ্য দিয়েই নব্বইয়ের দশকের উদ্বোধন হলো। এই এজেন্সির সঙ্গে এক এক করে যুক্ত হতে থাকলেন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ আলোকচিত্রীরা। নব্বইয়ের দশকটিও আমাদের ফটোগ্রাফিচর্চার আরেকটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’। আলোকচিত্রীদের দৃষ্টি তখন প্রসারিত হতে শুরু করেছে। গৎবাঁধা নিয়মের খোলস ছেড়ে তারা বাইরে বেরিয়ে আসছেন। ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া’। আমাদের আলোকচিত্রীরা যেন সেই ‘সাড়া’ পেতে শুরু করেছেন। ১৯৯৩ সালে আলোকচিত্রী মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকায় ‘প্রিজম’ নামে একটি ফটোগ্রাফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। একই বছর হাসান সাইফুদ্দিন চন্দন ও শফিকুল আলম কিরণসহ কয়েকজন মিলে চালু করেন ম্যাপ। নব্বইয়ের দর্শককে নতুন ছবি দেখালেন শফিকুল আলম শফি, শহীদুল আলম বাদল, শামসুল হক টেংকু, সাইফুল ইসলাম কল্লোল, ফিরোজ আহমেদ, শফিকুল আলম কিরণ, আবীর আবদুল্লাহ, জুয়েল সামাদ, রিশাদ আশরাফ উতল, জিয়া জহির পল্লবসহ আরো অনেকে। এই দশকের শেষের দিকে ঘটে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা, পাঠশালা দক্ষিণ-এশীয় ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিট-এর জন্ম। ১৯৯৮ সালে ড. শহিদুল আলম তাদের দৃক পিকচার লাইব্রেরির অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই ঘটনাকে দ্বিধাহীনভাবে বাংলাদেশের ‘আলোকচিত্রিক রেনেসাঁ’ বলা যায়। ফটোগ্রাফিবিষয়ক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না পাঠশালা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফিচর্চার মধ্যকার দূরত্বও ঘুচিয়ে দিতে শুরু করলো। দেশের আলোকচিত্রীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে দাঁড় করালো এবং বিদেশি ফটোগ্রাফি-প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময় নিশ্চিত করলো। দিনে দিনে এটি তুখোড় আলোকচিত্রী তৈরির শিল্পাগারে রূপ নিলো। এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফটোগ্রাফিভিত্তিক আন্তর্জাতিক উৎসব- ছবি মেলার আয়োজকও ড. আলম এবং তার দল। দুবছরে একবার ঢাকায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। পঞ্চম ছবি মেলায় ৩৩টি দেশের আলোকচিত্রী অংশ নেয়। ২০০০ সাল থেকে ছবি মেলা যাত্রা শুরু করে।
পাঠশালা তৈরি করেছে জেএমবি আকাশ, সাইফুল হক অমি, এন্ড্রু বিরাজ, সাহাদাত পারভেজ, কবির হোসেন, দীন মোহাম্মদ শিবলী, তাসলিমা আক্তার, তানজিম ওহাব, মুনেম ওয়াসিফ, খালেদ হাসান, কেএম আসাদ, প্রীত রেজা, শাহরিয়া শারমিন, সরকার প্রতীক, রাহুল তালুকদারের মতো আরো অনেক দুর্দান্ত আলোকচিত্রী।
পাঠশালা-বলয়ের বাইরেও ফটোগ্রাফিচর্চা সুবিস্তৃত। দাপটের সঙ্গে ফটোগ্রাফির বিভিন্ন অঙ্গনে এখন কাজ করছেন অগণিত আলোকচিত্রী। তাদের মধ্যে, মনিরুল আলম, মুনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ রকিবুল হাসান, জসীম সালাম, সুমন ইউসুফ, এএম আহাদ, খুদরত-এ-খোদা, ইউসুফ তুষার, আবু নাসের, পনির হোসেন, অভিজিৎ নন্দী, অনিক রহমান, এখলাস উদ্দিন, তানভীর হাসান রোহান, আব্দুল মোমিন, মোহাম্মদ ইমাম হাসান, মাসফিকুর আখতার সোহানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০০৪ সালে বাজারে আসে ফ্লিকার ও ফেসবুক। এদুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গোটা বিশ্বের ফটোগ্রাফিচর্চায় আমূল পরিবর্তন আনে। এই দুই মাধ্যমের কারণে ছবি তোলা, প্রকাশ এবং অন্যের সঙ্গে ছবিবিষয়ক আলোচনার আদান-প্রদান অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে যায়। দুই মাধ্যমেই আলোকচিত্রীরা অত্যন্ত ক্রীয়াশীল ‘গ্রুপ’ তৈরির সুযোগ পেয়ে যান। বাংলাদেশের সৌখিন আলোকচিত্রীরাও এই সুযোগ গ্রহণ করলেন। গড়ে উঠলো ভীষণ জনপ্রিয় সব অনলাইনভিত্তিক ফটোগ্রাফি-গ্রুপ। এসব গ্রুপের কারণে আলোকচিত্রীদের মধ্যে ফটোগ্রাফি শিক্ষা ও তথ্য আদান-প্রদান এবং যোগাযোগ অবাধ হলো। বাংলাদেশে ফটোগ্রাফিচর্চায় এসব গ্রুপের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০০০ সালের পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজকেন্দ্রিক ক্লাবের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
২০০০ সাল থেকে আমাদের ফটোগ্রাফিতে দ্রুত একের পর এক পরিবর্তন আসতে থাকে। যেমন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো সংবাদচিত্রের চাহিদা। এই চাহিদা পূরণে ফটোসাংবাদিক ইয়াসিন কবির জয় ২০০৪ সালে ফোকাস বাংলা নামে একটি বার্তা ও ফটো এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। যা খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর পরের বছর প্রতিষ্ঠিত হয় আরেকটি ফটো এজেন্সি- বাংলার চোখ।
ডকুমেন্টারি ও ফটোসাংবাদিকতার বাইরে- ‘ফাইন-আর্ট ফটোগ্রাফি’চর্চার লক্ষে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ফটোফি একাডেমি অব ফাইন-আর্ট ফটোগ্রাফি। এই একাডেমিই বাংলাদেশে প্রথম ফাইন-আর্ট ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী এবং বর্ষসেরা আলোকচিত্রী পুরস্কার প্রবর্তন করে। ২০১২ সালে পেলাম আরো একটি আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- কাউন্টার ফটো। বিশিষ্ট আলোকচিত্রী সাইফুল হক অমি এর কর্ণধার। এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র ফটোগ্রাফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।
অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফিচর্চা অনেক বেশি অগ্রসর ও সফল। আলোকচিত্রীদের জন্য বরাদ্দ বিশ্বের এমন কোনো পুরস্কার নেই যা বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা অর্জন করেনি। পুলিৎজার বাকি ছিল, গত বছর রয়টার্সের পনির হোসেন সেই পুরস্কারের অংশীদার হলেন।
ফটোগ্রাফিতে আমাদের বিপুল সফলতার প্রধান কারণ, আমাদের আলোকচিত্রীরা ফটোগ্রাফিচর্চার বিবর্তনের সঙ্গে সব সময় তাল মেলাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে আরও সফলতার জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি প্রাতিষ্ঠানিক ফটোগ্রাফিচর্চা। এ জন্য আরও ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি চাই সরকারি বিনিয়োগ। আশা করি, দেশীয় আলোকচিত্রীদের বাঁধভাঙা সফলতায় এবার সরকারের নীতি-নির্ধারকদের চোখ খুলবে।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর
ছবিঃ সংগৃহীত
মন্তব্য (0)
ফেসবুক মন্তব্য (0)