মোবাইলে ছবি তোলার ৬ টি গুরুত্বপূর্ন কৌশল !
মোবাইল এ ছবি তোলা এখন বর্তমান সময়ের সব থেকে বহুল ব্যবহৃত বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোতে যুক্ত হচ্ছে শক্তিশালী সব ক্যামেরা ইউনিটের, যা আগের চাইতে স্মার্টফোনে ছবি তোলার হার অনেক অংশেই বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে অনেকেই পয়েন্ড অ্যান্ড শুট ক্যামেরাগুলোর পরিবর্তে ভালো একটি স্মার্টফোন কিনে নিচ্ছেন যাতে করে কথা বলার পাশাপাশি টুক-টাক ছবি তোলার কাজও সেরে নেয়া যায়। কিছু কিছু ফ্লাগশিপ ডিভাইসে বর্তমানে ম্যানুয়াল কনট্রোল পর্যন্ত দেয়া হয়েছে যেখানে আপনি একটি ডিএসএলআর বা সেমি-ডিএসএলআরের মতই শাটার স্পিড, আইএসও, হোয়াইট ব্যালান্স ইত্যাদি পরিবর্তন করতে পারবেন।
আর আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো হিসাব করেন তবে দেখতে পাবেন অর্ধেকের বেশি ছবিই তোলা হয়ে থাকে স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে! এথেকেই বুঝে নেয়া যায় যে এখন ছবি তোলার ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ক্যামেরার প্রাধান্য মোটামুটি বেশিই। আর তাই আজকে স্মার্টফোন দিয়ে ভালো মানের ছবি তোলার কিছু টিপস নিয়ে এলাম, আশা করি আপনাদের কাজে আসবে। তাহলে চলুন, সময় নষ্ট না করে শুরু করা যাক।
অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করে ছবি তুলুন-
আমরা বেশিরভাগ সময়েই আমাদের আই লেভেল থেকে ছবি তুলে থাকি। আই লেভেল বলতে বোঝায় আমরা যে ভ্যিউ দেখি আমাদের চোখ দিয়ে বা আমাদের চোখ যে উচ্চতা থেকে দেখে। আমরা আই লেভেলে ছবি বেশি তুলে অভ্যস্ত কেননা আমরা ছোট থেকেই আমাদের আই লেভেল থেকে দেখে দেখে পরিবেশটাকে সেই লেভেলের অনুপাতেই সাজিয়ে নিয়েছি। ফলে, আমাদের কাছে আই লেভেল থেকে দেখা সব কিছুই খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, আপনি যদি এই আই লেভেলের পরিবর্তে ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলে থাকেন তবে আপনার নিজের কাছেই ভিউ গুলো কিছুটা অন্যরকম এবং অবশ্যই ইন্টারেস্টিং মনে হবে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝাই ব্যাপারটা। ধরুন, আপনি একটি সবুজ মাঠের মধ্যে বসে আছেন। মাঠে একটি গরু ঘাস খাচ্ছে। এখন আপনি স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে গরু যেভাবে দেখেছেন সেটি আপনার কাছে স্বাভাবিক একটি বিষয় কিন্তু আপনি যদি হাটু গেঁড়ে বসে গরুর দিকে তাকান তবে অন্যরকম লাগবে এবং আপনি যদি চিত হয়ে শুয়ে গরুর দিকে থাকান তবে আমি হলফ করে বলতে পারি আপনার কাছে নতুন একটি ভিউ উন্মোচন হবে। আমি হয়ত গরু বাদে অন্য কিছু দিয়ে উদাহরণ টানতে পারতাম তবে আমি মোটামুটি একটি সাবজেক্ট ব্যবহার করতে চাচ্ছিলাম না। আপনি পারলে গরু দিয়েই ট্রাই করেন, আমার বিশ্বাস আপনি অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করে ছবি তোলার ব্যাপারটা সহজেই বুঝতে পারবেন।
মানুষের ছবি তোলার ক্ষেত্রে বা আপনার নিজের সেলফি তোলার ক্ষেত্রেও আপনি উপর থেকে ছবি তুলে দেখতে পারেন, অ্যাঙ্গেল পরিবর্তনের ফলে আপনি নতুন মাত্রার একটি ছবি পাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
শাটার স্পিড নিয়ে খেলুন-
শাটার স্পিড নিয়ে অনেকেই খুব বেশি একটা মাথা ঘামান না, বেশিরভাগ সাধারণ ব্যবহারকারী হয়ত এই টার্মটি সম্পর্কেই জানেন না। মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি শাটার স্পিড কম বেশি করেও আপনার ছবিতে নাটকীয় ভাবে পরিবর্তন আনতে পারবেন। আপনি নিশ্চয়ই ইন্টারনেটে পাখি উড়ছে বা বাঘ দৌড়াচ্ছে এমন ছবি দেখেছেন? কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে পাখিটিকে বা বাঘটিকে কীভাবে তাদের মুভমেন্টের সময় এত স্পষ্ট ভাবে স্থির করে ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে? এই ছবিগুলো হচ্ছে হাই শাটার স্পিডের কারণে হয়েছে। আবার আপনি নিশ্চয়ই রাতের রাস্তায় গাড়ীর লাইটের ট্রেইল ছবি দেখেছেন? এই ছবিগুলো হচ্ছে লো শাটার স্পিডের ফসল। তবে মূল কথা হচ্ছে শাটার স্পিড যত বেশি রাখবেন আপনার চারপাশে থেকে থাকা আলো ঠিক তত কম সময়ের জন্য আপনার ছবির মধ্যে দেখা যাবে আর যত কম রাখবেন তবে বেশি সময়ের জন্য আপনার চারপাশের আলো আপনার সেন্সরে পড়বে।
রুল অব থার্ড-
এটি মূলত ফটোগ্রাফাররা চমৎকার কম্পোজিশনের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। কথিত আছে যে রুল অব থার্ড ব্যবহার করে তোলা ছবিগুলো বেশিরভাগ সময়ই পারফেক্ট হয়ে থাকে। রুল অব থার্ড আপনি খুব সহজেই আপনার মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
আইএসও সম্পর্কে জানুন-
আইএসও টার্মটিও আলোর সাথে সম্পর্কিত। আপনি যত বেশি আইএসও ব্যবহার করবেন তত বেশি আলো আপনার সেন্সর ক্যাপচার করার জন্য পাবে আর যত কম ব্যবহার করবেন তত কম আলো আপনার সেন্সর প্রডিউস করতে পারবে আপনার ছবিতে। তবে, হাই আইএসও আলোর সাথে সাথে ছবিতে নয়েজও যুক্ত করে থাকে ফলে ফটোগ্রাফির অন্যান্য মেইন টার্মগুলোর সাথে পরিবর্তন করে নিতে হয়। যাই হোক, আপনি আপনার মোবাইলের সেটিংস থেকে আইএসও কম বেশি করে এখনই পরীক্ষা করতে পারেন। ডিফল্ট ভাবে মোবাইলে আইএসও অটো মোডে থাকে।
প্যানারোমা-
এমন একটি জায়গায় গিয়েছেন যেখানে বেশ কিছু জায়গা আপনার একটি ফ্রেমে বন্দী করতে ইচ্ছে করছে? ফটোগ্রাফাররা এক্ষেত্রে তাদের ক্যামেরায় ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করে থাকে, তবে তাও না হলে তারা প্যানারোমা মোড ব্যবহার করে। আমরা আমাদের মোবাইলে ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করতে না পারলেও খুব সহজে প্যানারোমা মোডে ছবি তুলতে পারব। ট্রাই করে দেখুন, স্টেডি হাত থাকলে অবশ্যোই আপনি নিজেই আপনার তোলা ছবি দেখে অবাক হয়ে যাবেন।
এইচডিআর-
এইচডিআর টার্মটির পূর্নরূপ হচ্ছে ‘হাই ডায়নামিক রেঞ্জ’ যা আপনার ছবিতে নতুন মাত্রা যোগ করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় মূলত একের বেশি বিভিন্ন এক্সপোজারের ছবি নিয়ে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেগুলোকে এক সাথে করা হয় এবং ম্যানুয়ালি সবগুলো ছবি থেকে বিভিন্ন অংশ মিলিয়ে একটি ফাইনাল আউটপুট তৈরি হয় যে ছবিটিতে সাধারণের চাইতে ডায়নামিক রেঞ্জ অনেক বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানের প্রায় সব মোবাইলেই এই সুবিধাটি আছে এবং এটি নিজে নিজেই ছবি তুলে পোস্ট প্রোসেসিং করে দেয় খুব সহজেই। চেষ্টা করে দেখুন।
ছবি যখন তুলছেনই, যখন তুলবেনই তখন শৈল্পিক ভাবে কেন নয়? আশা করি আজকে যে পয়েন্টগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি সেগুলো আপনাদের বুঝতে কোন রকম সমস্যা হয়নি।
সূত্রঃ উইকিব্লগ থেকে সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
মন্তব্য (0)
ফেসবুক মন্তব্য (0)