বাবার ছবি আর কোনো দিন তুলতে পারব না।
পিয়াল দত্ত শৌখিন আলোকচিত্রী। স্নাতক শেষ করা এই তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে ভিডিপিতে কাজ করেন। তাঁর বাবা মিহির কান্তি দত্ত আনসার ভিডিপিতে চাকরিরত। সোমবার উপজেলা নির্বাচনের সময় বাপ-ছেলে দুজনের দায়িত্ব পড়েছিল সাজেকের কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে মিহির ছেলের কাছে আবদার করেছিলেন তাঁর একটা ছবি তুলে দিতে। আনসারের পোশাক পরিহিত অস্ত্রসহ ছেলের হাতে তোলা ছবিটি মিহির কান্তির জীবনের শেষ ছবি। তিনি নিজেই যে এখন ছবি হয়ে গেলেন।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে নিজের মুঠোফোনে বাবার শেষ ছবিটি দেখিয়ে কাঁদছিলেন পিয়াল দত্ত। বন্ধুবান্ধব, স্বজন সবাইকে দেখাচ্ছিলেন ছবিটি। আর বলছিলেন, ‘আর কোনো দিন ছবি তুলতে পারব না বাবার।’
সোমবার রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনে কংলাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাপ-ছেলে দুজনই সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন। কংলাক স্কুলসহ তিন কেন্দ্রের ফলাফল এবং ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার সময় গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বাঘাইছড়ি-দীঘিনালা সড়কের নয়মাইল এলাকায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন মিহিরসহ ৭ জন। আহত হন ২০ জনের বেশি।
মিহির দত্তের বাড়ি বাঘাইছড়ি থেকে আট কিলোমিটার দূরে তরঙ্গ্যাতলী এলাকায়। তাঁর দুই ছেলে। অভিষেক দত্ত এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পিয়াল বড়। পরিবারের বড় সন্তান মিহির। গতকাল মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মিহিরের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। তখন সেখানে ভিড় করেন তাঁর ছোট ভাই প্রদীপ দত্ত।
পিয়ালকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বড় ভাইয়ের করুণ পরিণতি শোনেন প্রদীপ। পিয়াল বলতে থাকেন, ‘একসঙ্গে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করি। পরে ভোট শেষে রওনা দিই। কিছুদূর আসার পর আমি চাঁদের গাড়ি থেকে নেমে যাই। মোটরসাইকেলযোগে বাড়ির দিকে রওনা হই। বাবা সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলায় রওনা হন। এর কিছুক্ষণ পর থেকে ফোনে আর পাই না। তখন ভয় ঢুকে যায়। সাতটার পর একপর্যায়ে একজন ফোন ধরে বলেন, বাবার শরীরে গুলি লেগেছে।
পিয়াল-প্রদীপ দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মিহির দত্তের স্ত্রী শেবু রানী দত্ত একমাত্র উপার্জনক্ষম হারিয়ে দুই ছেলে নিয়ে এখন দিশাহীন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
মন্তব্য (0)
ফেসবুক মন্তব্য (0)