চারুকলা উৎসব ২০১৯
ঢাকার বরেণ্য সব শিল্পী এখন ভাওয়াল শালবনে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে ছবি আঁকতে বসেছেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ভাওয়াল মির্জাপুর হাজী জমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। বড়রা এঁকেছেন, পাশাপাশি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন ছোটদের। ২৭ মার্চ ভাওয়াল মির্জাপুর হাজী জমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ‘চারুকলা উৎসব ২০১৯’। তিন দিনব্যাপী আঁকা ছবিগুলো নিয়ে সেখানেই আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনী। আজ শনিবার শেষ হচ্ছে আর্টক্যাম্প। তবে প্রদর্শনী চলবে আরও তিন দিন। এই উৎসবে আঁকা পাঁচ শতাধিক ছবি নিয়ে ১৯ থেকে ২২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে আরেকটি প্রদর্শনী হবে।
আর্টক্যাম্পের বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি রক্ষার আহ্বান। তিন দিনে শিল্পী রফিকুন নবী এঁকেছেন দুটি ছবি। একটি কাকের, অন্যটি ছাগলের। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এ দুই প্রাণীর অস্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ। অন্য শিল্পীদের তুলিতেও ঘুরেফিরে এসেছে প্রকৃতিকে বাঁচানোর বার্তা। আর্টক্যাম্পে শিল্পীদের মধ্যে আরও ছিলেন হামিদুজ্জামান খান, সৈয়দ আবুল বারক আলভী, আবদুস শাকুর শাহ, ফরিদা জামান, মোহাম্মদ ইউনুস, শেখ আফজাল, আফজাল হোসেন, মোস্তাফিজুল হক, সামসুদ্দোহা, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য্য, মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ ইকবাল, অনুপম হুদা, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীরা অংশ নিয়েছেন এ আর্টক্যাম্পে। যোগ দেয় গাজীপুরের ২০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী। প্রায় ৩২০ জন শিল্পীর ৫ শতাধিক চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে ভাওয়াল মির্জাপুর হাজী জমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণের প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া সেখানে আছে ১৫টি স্থাপনাশিল্প, সেখানে শিল্পীরা তুলে ধরেছেন পরিবেশ ধ্বংসের নানা চিত্র। শুভ অ সাহা ও ইমরান সোহেলের যৌথ স্থাপনাশিল্পে তুলে ধরা হয়েছে ইটভাটা কীভাবে জলবায়ু বদলে দিচ্ছে। রঞ্জিত কর্মকারের স্থাপনাশিল্পে ‘ইটশ্রমিকের উপাখ্যান’-এ দেখানো হয়েছে ইটভাটায় কর্মরত একজন শ্রমজীবীর শারীরিক নানা সমস্যার কথা। ইটের স্তূপের ভেতরে একটি কয়লাখণ্ডকে শিল্পী এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা দেখে বোঝা যায় একজন ইটশ্রমিকের জীবন কতটা দুর্দশাগ্রস্ত।
জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় এ আর্ট ক্যাম্প। শিক্ষার্থীরা ‘এসো হে’ গানের সঙ্গে নেচে সম্মেলক কণ্ঠে গায় ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। একক কণ্ঠে গান করেন জাহাঙ্গীর আলম এবং ব্যান্ডদল সর্বনামের শিল্পীরা।
আয়োজকেরা জানান, অবাধে বৃক্ষনিধন, অপরিকল্পিত কলকারখানা, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও অসচেতনতার কারণে বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে শালবনের পরিবেশ। এ উৎসবের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মনে পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা ও সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত, বসবাসযোগ্য একটি সুস্থ, সুন্দর ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলাও এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। ২০১৬ সালে জয়পুরহাটে শুরু হয় এই চারুকলা উৎসব। এ বছর এর দ্বিতীয় আয়োজন। আগামী বছর এ উৎসব হবে নীলফামারীতে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
মন্তব্য (0)
ফেসবুক মন্তব্য (0)