পুলিৎজারজয়ী আলোকচিত্রী দলে প্রথম বাংলাদেশি পনির

পুলিৎজারজয়ী আলোকচিত্রী দলে প্রথম বাংলাদেশি পনির

রোহিঙ্গাদের ছবি তুলে 'ফিচার ফটোগ্রাফি' বিভাগে রয়টার্সের পুরো আলোকচিত্র বিভাগ এবার পুলিৎজার জিতেছে। বার্তা সংস্থাটির বাংলাদেশে নিযুক্ত আলোকচিত্রী মোহাম্মদ পনির হোসেনও আছেন এ তালিকায়। তার তিনটি ছবি 'ফিচার ফটোগ্রাফি'তে স্থান পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতায় সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার পুলিৎজারে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি স্থান পেলেন। আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি বিভাগের এ পুরস্কারটির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন বিভাগেও পুরস্কার জিতেছে রয়টার্স। তারা এই প্রথম একসঙ্গে দুটি পুলিৎজার পুরস্কার জিতল।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে যৌন হয়রানির খবর ফাঁস করে নিউইয়র্ক টাইমস ও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রতিবেদন করে ওয়াশিংটন পোস্ট যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছে। খবর রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসির।

রয়টার্সের এডিটর ইন চিফ স্টিফেন জে অ্যাডলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়ে এ বছর অনেক পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এমন সময়ে অনেক আশঙ্কা ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বিষয়ে নজর কাড়তে পারায় রয়টার্সের কর্মী হিসেবে আমরা গর্বিত।

 

 

মোহাম্মদ পনির হোসেনপনিরসহ রয়টার্সের সাত আলোকচিত্রীর ১৬টি ছবি এবার পুরস্কারের তালিকায় রয়েছে। অন্য আলোকচিত্রীরা হলেন- ড্যানিশ সিদ্দিকী, সো জেয়া তুন, দামির সাগোলিজ, আদনান আবিদি, হান্নাহ ম্যাককে ও ক্যাথাল ম্যাকনটন।

পুরস্কার পাওয়ার পর পনির হোসেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, গত সোমবার রাত ১টার দিকে বিষয়টি জানতে পারি। এর কিছুক্ষণ পরই লন্ডন অফিস থেকে নিশ্চিত করা হয়। তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তোলা ছবিগুলোই এবার এ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে। বিজয়ীদের হাতে সেপ্টেম্বরে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। তিনি সেখানে যাবেন বলে জানান।

এমন সুখবরে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশি এই আলোকচিত্রী আরও বলেন, সাংবাদিকতায় এ পুরস্কার অন্যরকম একটি ব্যাপার। খবরটি জানার পর আনন্দে চোখের ঘুম চলে যায়। তার মতে, পুরস্কারের চিন্তা করে তো কেউ ছবি তোলেন না। তবে মানুষ যখন কোনো দুর্দশায় পড়ে বা কোনো সংকট তৈরি হয় তখনই ফটোসাংবাদিকদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ আসে।

৪০ দিন বয়সী মৃত সন্তানের অসাড় দেহটি বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন এক নারী। বারবার তার মুখে চুমু খাচ্ছেন আর বিলাপ করে কাঁদছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে নৌকায় পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকাডুবিতে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। হৃদয়বিদারক এ মুহূর্তের ছবি তুলেছিলেন পনির হোসেন। এই ছবিটিও পুরস্কারের তালিকায় আছে।

তিনি তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ওইদিন সঙ্গে আরেক ফটোগ্রাফারকে নিয়ে শাহপরীর দ্বীপে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। তাদের সিএনজি অটোরিকশাচালক খবর দিলেন একটা নৌকাডুবি হয়েছে। এরপর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে সেখানে পৌঁছাই।

পনির হোসেন বলেন, ছবিগুলো যখন তুলি তখন আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। কিন্তু হোটেলে ফিরে সম্পাদনা করতে গিয়ে ল্যাপটপে যখন ছবিগুলো দেখলাম, তখন আর আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। চোখে পানি চলে আসে। ওই সময়টায় কাজ শেষে ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে প্রতিদিন একটি গানই শুনতাম- 'মানুষ মানুষের জন্য'। তিনি আরও বলেন, মানুষের কষ্ট কত রকম এটা রোহিঙ্গা ইস্যু যদি কাভার না করতাম তাহলে সম্ভবত আমি বিষয়টা বুঝতাম না।

পুলিৎজারজয়ী পনির হোসেনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে তিনি রয়টার্সে কাজ করছেন। এর আগে নূর ফটো এজেন্সি ও জুমা প্রেসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন।

সূত্রঃ দৈনিক সমকাল